রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি অন্তর্গত বাঘাইছড়ি থানার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটির ছাদ বলা হয়। প্রকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত মেঘের দেশ খ্যাত সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে কাঙ্খিত ভ্রমণ স্থান।

২০১৪ সালে প্রথম সাজেকে আসি ১টা টয়োটার পিকআপ ও ১টা ল্যান্ডক্রুজারে খাগড়াছড়ি হয়ে।

পান্থপথ মোড় থেকে বাসে উঠে সারারাত জার্নি করে ভোরবেলা খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বর এসে নামি, আলআমিন হোটেলে ফ্রেশ হয়ে মনটানা হোটেলে নাস্তা করে সকাল ০৮ টায় রওয়ানা দিয়েছিলাম সাজেকের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় কিছু ফরমালিটিজ মেইনটেইন করে দুপুর ১২ টায় সাজেকে পৌঁছাই।

তখন সাজেকে এত রিসোর্ট ছিলনা সাজেক আসলেই সুন্দর ছিল, ছবির মতো সুন্দর। রাস্তা থেকে সুন্দর মিজোরাম ভিউ দেখা যেত, মেঘের উপর মেঘ ভাসতো। অন্যরকম একটা মাদকতা, ফিলিংস কাজ করতো সাজেকের জন্য। এখানকার রুইলুই পাড়ার মন্দিরের টিলা থেকে শুরু করে, স্টোন গার্ডেন, হেলিপ্যাড ১ ও ২, ঝাড়ভোজ পিকনিক স্পট, জিরো পয়েন্ট এবং কংলাক পাড়া সব গুলো স্পট অনবদ্য ছিল।

সাজেকের আর্মি রিসোর্ট ২টির বাইরে হানিমুন কর্টেজ ছিল মোষ্ট ওয়ান্টেড।

সাজেকের খাবার-দাবার গুলোর কথা না বললেই না, প্রতিটা রেসিপি ঝাল ছিল, দুপুরের চিকেন রেজালা, রাতে বারবিকিউ সকালের খিচুরি অন্যরকম স্বাদের জগৎ এ চলে গিয়েছিলাম।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা, রাত আর সকাল, প্রতিক্ষনেই আবহাওয়ার পরিবর্তন ছিল লক্ষ্যনীয়। সকালের সাজেক দেখে মনে হচ্ছিল আসলেই মেঘের দেশে, যেখানে মেঘেদের মেলা বসেছে।

তখন সাজেক এতটা জনপ্রিয় ছিলনা, এখনকার মত এতো টুরিস্ট যেত না। লোকজন একটু বেশি হলেই আদিবাসীদের ঘরে থাকতে হত।

তখনকার সাজেক আর আজকের সাজেক আকাশ পাতাল পার্থক্য। সাজেকর মানুষ গুলো আরও সহজ সরল ছিল, এখন তারা আগের মত সহজ সরল নেই, কমার্শিয়াল হয়ে গেছে। পানি অপ্রতুল ছিল, এখনোও তাই আছে। তখন বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে ৬-১১ পর্যন্ত জেনারেটর সার্ভিস দিত, এখন বিদুৎ চলে এসেছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক তখনও রবি এয়ারটেল আর টেলিটক ছিল এখন ও তাই। এখন এতো রাস্তা থেকে আরও ভিউ দেখার উপায় নেই। রিসোর্ট, হ্যালিপ্যাড আর কংলাক থেকেই ভিউ দেখতে হয়।

এছাড়া খাগড়াছড়ি দুপুরে ট্রেডিশনাল রেস্তোরাঁয় খাওয়া দাওয়া শেষ করে, আলুটিলা গুহা, আর জেলাপরিষদ পার্কটি অন্যতম। তবে রিসাং ঝর্ণাও আছে, এটা দিন দিন বিপদজনক ও কষ্ট সাধ্য হয়ে যাওয়ায় এখানে যাওয়া হয় না। রাতে ট্রেডিশনাল রেস্তোরাঁয় ব্যাম্বোচিকেন মেনু দিয়ে ডিনার শেষ করে রাতের বাসে ঢাকার পথে, ভোর ঢাকায় পৌঁছে ভ্রমণের ইতি টেনেছি।